August 2022


 

উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি আরও শক্তি সঞ্চয় করেছে। এটির কেন্দ্রের বাতাসের গতিবেগ ওঠে যাচ্ছে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ফলে উপকূলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন- উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের অদূরে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্ব্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা/ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে সমুদ্রবন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

গভীর নিম্নচাপ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। তাই উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বর্তমানে মৌসুমি বায়ুর অক্ষ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এ অবস্থায় আগামী শনিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পাবে।

২০১৯ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বৈধ বিদেশী কর্মীদের কল্যাণ দেখভালের দায়িত্ব পায় দেশটির সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন (সকসো)। এর আগে এই দায়িত্ব ছিল মালয়েশিয়ান লেবার ডিপার্টমেন্টের। সকসো মালয়েশিয়ান নাগরিকদের কল্যাণ দেখে থাকে। নিজ দেশের কর্মীর মত বিদেশী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার ফলে মালয়েশিয়ান ও বিদেশী কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য দূর হয়। 

সকসো কর্মীর দুর্ঘটনা হলে তার চিকিৎসা, পুনর্বাসন, আজীবন মাসিক ভাতা, সেবা প্রদানকারীর ভাতা, হুইল চেয়ার, কৃত্রিম পা, হাত লাগিয়ে দেয়, কর্মী মারা গেলে পরিবারকে মাসিক ভাতা দেয়, অবিবাহিত কর্মী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার পিতা মাতাকে আজীবন এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ভাই বোনকে মাসিক ভাতা দেয়। এই ভাতা কর্মী বা কর্মীর পরিবার নিজ দেশে অবস্থান করলেও পাবে। 

বাংলাদেশে অবস্থান করেও কিভাবে ভাতা পাবে সে বিষয়ে একটি কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সকসো কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্ণার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের নিকট একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সে থেকে বিষয়টি ঝুলে আছে। ফলে বাংলাদেশে বসে আজীবন সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 


এদিকে, মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নিয়োগকর্তারা সকসোতে বিদেশী কর্মীদের নাম নিবন্ধন করেছে। ফলে করোনা কালে ৩ হাজারের অধিক কর্মীর নানান ধরনের সুবিধা প্রাপ্তির তথ্য জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। বাংলাদেশ থেকে চুক্তি স্বাক্ষর না করায় দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে দেশে ফিরে গেলে দেশে বসে আজীবন ভাতা প্রাপ্তির এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে লাশ হয়ে দেশে ফিরে গেলে পরিবারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছে। 

দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে দূতাবাস অনেক আগেই চুক্তিটি মতামতসহ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এবং ওয়েজ আর্নার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের পাঠিয়ে দিয়েছে। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে জরুরী হওয়ায় দূতাবাস প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়ার নিকট থেকে তাগাদা পাচ্ছে এবং একইভাবে দূতাবাস ওয়েজ বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ১৩ আগষ্ট শনিবার জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওয়েজ বোর্ডের কাউকে পাওয়া যায়নি। 

এদিকে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডের তৎকালীন পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো: শফিকুল ইসলামে নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি সকসোর সাথে সভা করেন। সকসো প্রধান নিজে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও ওয়েজ আর্নারস ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের সাথে সাক্ষাৎ ও সভা করে এ বিষয়টির জন্য অনুরোধ করেন। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সরোয়ার ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর নিজেও সকসো”র প্রধান নির্বাহীর সাথে বৈঠক করেন সে বৈঠকেও সকসো”র প্রধান নির্বাহী পরিচালক, কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অনুরোধ করেন।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশের কর্মীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ প্রান্তে নিশ্চয়তা চায়। চুক্তি করা হলে ওয়েজ বোর্ডের কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোর্ড সহযোগিতা পাবে। এরফলে বাংলাদেশে বসে মালয়েশিয়ান সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধূরী বলেন, ‘ মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য যে রকম দ্রুত গতিতে চুক্তি করেছে ঠিক এই কল্যানের কাজটিকেও গুরুত্ব দিয়ে চুক্তি করা নৈতিক দায়িত্ব। অহেতুক কালক্ষেপণ করা সমীচীন হবে না। 


এতে কর্মী ও কর্মীর পরিবার বঞ্চিত হবে। প্রবাসী কর্মীর ও পরিবারের দেশে বসে আজীবন ভাতা প্রাপ্তির ঘটনা এটাই প্রথম এবং ইতিহাস। সরকারের এ সাফল্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।’ 

এদিকে যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন এবং পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবেন দূতাবাস থেকে তাদের তথ্য চেয়ে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের নিকট শতাধিক পত্র প্রেরণ করা হলেও দীর্ঘদিন যাবত তাদের সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ না করায় মালয়েশিয়া থেকে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য না দেবার কারনে অনেক কর্মীর পরিবার এর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget