পরিবারেই বেশি ঘটছে নারী নির্যাতন!
ভালোবেসে পছন্দের পুরুষকেই বিয়ে করেছিলেন হালিমা। কিন্তু বিয়ের পরই বদলে যেতে থাকেন ভালোবাসার মানুষটি। তুচ্ছ কারণে শরীরে পড়ে উত্তপ্ত চামচের ছ্যাঁকা। নিয়মিত মারধরে গোটা জীবনটাই দুঃসহ হয়ে গেছে। স্বামীর নির্যাতনে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে গেলে এমন চিত্র নিয়মিতই দেখা যায়। আসলে নারী নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটে কাছের মানুষের মাধ্যমে পারিবারিক বলয়ে। আর পরিবার এমন জায়গা, যেখানে নির্যাতন করলে কেউ দেখতে পায় না। তার নির্যাতনের ধরনটাও ভয়াবহ হয়। জরিপে দেখা গেছে, ঘরের প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন নারীই নানাভাবে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হন। ঘরের নির্যাতন মেয়েরা বাইরে প্রকাশও করতে চান না। তাই তারা দিনের পর দিন নীরবে সহ্য করে যান। বলার সুযোগ পান না।
নারী নির্যাতনের ব্যাপ্তি জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। পরিবারে জন্মের পূর্বে মেয়েশিশুর ভ্রুন হত্যা থেকে শুরু হয় নারী নির্যাতন। এরপর নবজাতক মেয়েশিশু হত্যা, নবজাতক মেয়ে শিশুর প্রতি অবহেলা, নবজাতক মেয়ে শিশুকে খাদ্য ও চিকিৎসা প্রদানে বৈষম্য। শৈশব-কিশোরীকালে বাল্যবিবাহ,পরিবারের বা আশেপাশের লোকজনের দ্বারা যৌন নিপীড়ন, খাদ্য ও শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রদর্শন। বিবাহিত জীবনে স্বামী কর্তৃক ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও হত্যা, স্বামী বা ঘনিষ্ঠ মানুষ কর্তৃক নির্যাতন, গর্ভকালীন নির্যাতন। বৃদ্ধ বা প্রবীণ বয়সে বিধবাদের উপর নিপীড়ন। এসব ঘটনাগুলোই কিন্তু ঘটছে নারীর নিজ পরিবারে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে ৩৮.৮৬ শতাংশ শৈশবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। তার মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের দ্বারা ৩৫.২৮ শতাংশ যৌন নিগ্রহের শিকার হয়। শৈশবে অপরিচিতদের দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হন ২৮.১৭ শতাংশ। এ ছাড়া ১৬.৫০ শতাংশ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এমন আচরণের শিকার হয়। জরিপে উঠে এসেছে, শৈশবের এসব ঘটনা ২৮.৪৩ শতাংশের মনে সবার প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম দেয় ও ২৮.১৭ শতাংশের ভেতর পুরুষবিদ্বেষী মনোভাবের সৃষ্টি হয়।
সেকারনে নারী নির্যাতন কমাতে নারীকে যেমন সচেতন হতে হবে,তেমনি পুরুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু আইন করেই বন্ধ করা যাবে না, এ জন্য চাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। পরিবার থেকেই নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা শুরু করতে হবে। পারিবারিক পরিবেশ একটা গুরুত্ব বহন করে। নিজের পরিবারে যদি নারী-পুরুষ বৈষম্য থাকে, তাহলে সেই পরিবারের ছেলেটি নারীকে অবহেলার চোখে দেখতে থাকে। যে ছেলেসন্তান মায়ের প্রতি বাবার নির্যাতন দেখে, সে বড় হয়ে অন্য নারীদের প্রতিও সে রকম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড় হয়।
আমীর মুহাম্মদ. সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক ইত্তেফাক।
Post a Comment