April 2025


 


লাগুনা গারসন ব্রিজ: গোলকধাঁধার মত এক সেতু, প্রকৃতি আর নকশার অপূর্ব প্রেমকথা

পৃথিবীতে এমন কিছু স্থাপত্য আছে, যেগুলো কেবল ইট-পাথরের নির্মাণ নয়—এগুলো হয়ে ওঠে দর্শন, দৃষ্টিভঙ্গি, কখনো প্রকৃতির সঙ্গে মানবতার এক গোপন সংলাপ। উরুগুয়ের একটি শান্ত, সবুজ লেগুনার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এমনই এক আশ্চর্য সৃষ্টি হলো লাগুনা গারসন ব্রিজ—যার আকার গোল, ভাবনা মুক্ত, আর দৃষ্টিনন্দনতায় যেন এক শিল্পকর্ম।

অবস্থান: যেখানে প্রকৃতি গল্প বলে

লাগুনা গারসন ব্রিজ অবস্থিত উরুগুয়ের মালডোনাদো ও রোচা প্রদেশের মাঝামাঝি, সমুদ্রের এক ছায়া মাখানো লেগুনা বা হ্রদের উপর। চারপাশে বিস্তীর্ণ নীল জল, ঝিরঝির হাওয়া আর নীরব পাখিদের ডানা ঝাপটানো—এমন এক পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে এই গোল সেতুটি, ঠিক যেন প্রকৃতির কোলে বসে থাকা এক ধ্যানমগ্ন সাধু।



নকশা: গোল যে পথ দেখায়

সেতুর আকার দেখলে প্রথমে চোখ আটকে যায়—এটা তো সরল নয়, সোজা নয়, বরং এক নিখুঁত বৃত্ত! স্থপতি রাফায়েল ভিনোলি যেন ক্যানভাসে এক গোল ঘূর্ণি এঁকেছেন, যেটা শুধু গাড়ির গতি কমায় না, মানুষের ভাবনার গতিও খানিকটা স্তব্ধ করে দেয়। কারণ এই সেতুতে পৌঁছালেই বুঝতে পারা যায়—এখানে শুধু গন্তব্য নয়, যাত্রাটাই মুখ্য।

গোলাকৃতি নকশা গাড়িকে বাধ্য করে ধীর হতে, পথচারীদের দেয় চারপাশ দেখে হাঁটার অবকাশ, আর প্রকৃতিকে—তা তো এমনিতেই এখানে রাণীর আসনে।

পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধা

লাগুনা গারসন ব্রিজ শুধু স্থাপত্যের কারিগরি দক্ষতার পরিচায়ক নয়, এটি প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক চমৎকার উদাহরণ। নির্মাণের সময় প্রকৃতির ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। লেগুনার পানিপ্রবাহ অবাধে চলতে পারে, জলজ প্রাণীরা ভয় পায় না, আর পাখিরা আজও নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়—এই সেতুর ঠিক পাশ দিয়ে।



পর্যটকদের পায়ের ধ্বনি

সেতুটি খুলে দেওয়ার পর থেকে এটি হয়ে উঠেছে উরুগুয়ের এক পরিচয়চিহ্ন, এক অনন্য পর্যটন আকর্ষণ। কেউ আসে সেলফি তুলতে, কেউ আসে স্থাপত্য দেখতে, কেউ আসে কেবলই প্রকৃতির সৌন্দর্যে অবগাহন করতে। এই ব্রিজে হাঁটলে এক অদ্ভুত প্রশান্তি পাওয়া যায়—যেন সময় থেমে গেছে কিছুক্ষণের জন্য।

সেতুর পরিপূর্ণতা

লাগুনা গারসন ব্রিজ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—উন্নয়ন মানেই শুধু কংক্রিটের উঁচু দালান নয়, কখনো কখনো সেটা হতে পারে প্রকৃতির সঙ্গে এক সম্মানজনক বোঝাপড়া। গোল এই সেতু আমাদের শেখায়—জীবন সবসময় সোজা পথে চলে না, তবুও সেই বাঁকেই থাকে সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য।




 নিচে ৭টি গাছের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো শুধুমাত্র পানিতে রেখে অনায়াসে বাড়ির রান্নাঘর বা বারান্দায় চাষ করা যায়। এসব গাছ শুধু শোভা বাড়ায় না, অনেকটা স্বাস্থ্য ও রান্নার জন্যও দারুণ উপকারী।



---


🌿 ১. পুদিনা (Mint)

হালকা রোদে ভালো থাকে।

পাতা রিফ্রেশিং গন্ধ দেয় ও অনেক রান্নায় ব্যবহার হয়।

কাণ্ড কেটে পানিতে রাখলে সহজেই শিকড় গজায়।


---


🌿 ২. পার্সলে (Parsley)

সালাদ, স্যুপ, গার্নিশিংয়ে ব্যবহৃত হয়।

পানিতে রেখে ২–৩ সপ্তাহে শিকড় বের হয়।


---


🌿 ৩. রোজমেরি (Rosemary)

হালকা ঘ্রাণযুক্ত এই গাছ রান্নায় ও সুগন্ধির কাজে ব্যবহৃত হয়।

ডাল পানিতে রেখে আলোতে রাখলে কয়েক সপ্তাহে শিকড় ধরে।


---


🌿 ৪. ওরেগানো (Oregano)

জনপ্রিয় ইতালিয়ান হার্ব।

সহজেই পানিতে শিকড় গজায়। রান্নায় সুস্বাদু ফ্লেভার দেয়।

---


🌿 ৫. গ্রিন অনিয়ন / পেঁয়াজ পাতা (Green Onion)

পেঁয়াজের গোড়া কেটে পানিতে রাখলেই নতুন পাতা গজায়।

প্রতিদিন কেটে ব্যবহার করা যায়।


---


🌿 ৬. টাইম (Thyme)

খুবই সুগন্ধি হার্ব।

এর ডাল পানিতে রাখলেই নতুন শিকড় গজাতে শুরু করে।

রোস্টেড খাবারে ও চায়ে ব্যবহৃত হয়।


সমুদ্রের দীর্ঘ জলরাশি আর অথৈ পানির বড় বড় ঢেউ হিসেবে সমুদ্র সকলের কাছেই প্রিয়। সমুদ্রের মোহনীয় সৌন্দর্য যে কাউকে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে। সমুদ্রের উপরিভাগ যতোটা সুন্দর এর তলদেশ ঠিক ততোটাই রহস্যময়। এমন রহস্যময় একটি অংশ রয়েছে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে, যাকে বলে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। এটি বঙ্গোপসাগরের একটি সংরক্ষিত স্থান। ব্যতিক্রমধর্মী ভৌগোলিক গঠন ও সামুদ্রিক জীব বৈচিত্র্যের প্রাচুর্যের কারণে বঙ্গোপসাগরে এই খাদটি বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায়।


সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এর অর্থ হলো, যার কোনো তল নেই। বঙ্গোপসাগরের এই অঞ্চলটির নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি রহস্য। আঠারশো শতকের শেষ দিকে ডুবে যাওয়া একটি বৃটিশ যুদ্ধজাহাজের খোঁজে এসেছিল দেশটির আরো কয়েকটি জাহাজ। এর সঙ্গে ছিল একদল জরিপকারীও। কোনো নিশানা না পেয়েই এর নাম দেয় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড।

১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ হেক্টর নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত এলাকাটি সবার নজরে আসে ২০১৪ সালে। গভীরতম এ উপত্যকাটি প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং গড় গভীরতা প্রায় ২৬০০ মিটার। এখানকার ডুবো গিরিখাত বঙ্গীয় উপবদ্বীপের অংশ। যা বিশ্বের বৃহত্তম ডুবো গিরিখাত।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্পত্তি নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলেও সাধারণভাবে মনে করা হয় অঞ্চলটি এক লাখ পঁচিশ হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল। ইতিহাসের তথ্য মতে, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের মধ্যকার এ গভীর খাদটি ‘গঙ্গা খাদ’ নামে পরিচিত। বিশ্বের বড় ১১টি বড় উপত্যকার একটি।



কথিত রয়েছে ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে ২১২ টন ওজন বিশিষ্ট গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া সেই ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজের খোঁজে এসেছিল দেশটির আরো কয়েকটি জাহাজ। তাদের সঙ্গে ছিল এক জরিপকারী দল। শেষ পর্যন্ত ডুবে যাওয়া জাহাজের হদিস না পেয়ে এই অঞ্চলটির নাম দেওয়া হয় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অর্থাত্ যার কোনো তল বা সীমা নেই। স্থানীয় জেলেরা অঞ্চলটিকে বলে ‘নাই বাম’। কারণ জেলেরা ফুট বা মিটারে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ না করে বাম হিসেবে যেমন দশ বাম, বিশ বাম এভাবে পরিমাপ করে থাকে। এই অঞ্চলটি এতোটাই গভীর যার কোনো বাম পাওয়া যায় না, সেজন্য জেলেরা ‘নাই বাম’ বলে থাকে।

প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর খাদ মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো। বঙ্গোপসাগরের অন্যতম মাছের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি আছে বিশাল তিমি, ডলফিন, হাঙর, কচ্ছপ আর বিরল প্রজাতির কিছু জলজপ্রাণী। প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইলের বিস্তীর্ণ এলাকাটি বিরল জীববৈচিত্রের নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র। এসব সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো তিমি, পপাস ডলফিন, পৃথিবীর বৃহত্তম ইরাবতী ডলফিন, গোলাপি পিঠের কুঁজো ইন্দো প্যাসিফিক ডলফিন ও মসৃন পিঠের (পাখনাহীন) ইমপ্লাইস ডলফিন। এছাড়া এটি ডলফিন পরপাস ও তিমির প্রজননক্ষেত্রও। বিজ্ঞানীদের মতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে ডলফিন, পরপাস ও তিমি—এই তিন প্রজাতির সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী একসঙ্গে দেখা যায়। এই সামুদ্রিক অঞ্চলে সী-গালসহ দশ প্রজাতির পাখি, ত্রিশ প্রজাতির মাছ, ব্রিড তিমি এবং মিল্কি তিমিসহ অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

 


জায়গাটি সমুদ্রবিজ্ঞানীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্র। এখানে সমুদ্রের গভীর অংশের পরিবেশ এবং জীবনের বৈচিত্র্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। এই অঞ্চলটি কার্বন চক্র এবং সমুদ্রের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। বঙ্গোপসাগরের স্রোত এবং বায়ুপ্রবাহ এই অঞ্চলের জলবায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে।

 

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড দেশের সম্ভবনাময় ব্লু ইকোনমির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। এখানকার পানির গুণগতমান শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার ও মালদ্বীপের চেয়েও উন্নত। বিশেষ করে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য ইকোলজিক্যাল ফিল্টার হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া এখানে যে মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তার সঠিক ব্যবহার করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব।

 

মনে চাইলে যেতে পারেন সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

সমুদ্রের দীর্ঘ জলরাশির বুকে জলজ প্রানীর অবাধ বিচরণ ও দিগন্তে উরে বেড়ানো পাখিদের কোলাহল স্বচক্ষে দেখতে চাইলে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসতে হবে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেলে নৌকায় ভেসে ভেসে মাছ ধরার দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ না করে পারবে না। রাতের সোয়াচ দেখতে দেখতে হঠাৎ ডলফিন বা তিমির হুটোপুটি বাংলাদেশে বসেই উপভোগ করা সম্ভব। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের সৌন্দর্য যে কতোটা মনোমুগ্ধকর হতে পারে তা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে গেলে অনুভব করা সম্ভব। আপনি যদি খুব বেশি এডভেঞ্চার প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে এই সামুদ্রিক খাদের পাশ থেকে ঘুরে আসা মিস করবেন না। নৌকার দুলুনি, রাতের সমুদ্র, সামুদ্রিক প্রাণী ও পাখির বিচরণ এই সবকিছুই উপভোগ করতে পারবেন সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ভ্রমনের মাধ্যমে।

 


সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার উপায়:

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড দুইভাবে যাওয়া যায়। সবথেকে সহজ মাধ্যম হলো মংলা থেকে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়া। আর দ্বিতীয় মাধ্যম হলো কুয়াকাটা হয়ে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়া। তবে কুয়াকাটা থেকে সব সময় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার ট্রলার পাওয়া যায় না। দেখে নিন ভিন্ন ভিন্ন দুইটি পদ্ধতিতে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার উপায়-


মংলা হয়ে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড-

মংলা হয়ে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে সরাসরি মংলা যাওয়ার বাস ধরতে হবে। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে সরাসরি মংলা যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ কিংবা দিগন্ত পরিবহনের বাসে চেপে সরাসরি মংলা পৌঁছাতে পারবেন।

ইকোনোমি ক্লাসে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৭০০ টাকা। মংলা থেকে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার, তাই যাতায়াতে খুব বেশি সময় লাগে না। মংলা থেকে প্রতিদিনই সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উদ্যেশ্যে মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে যায়। একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন কোনো জাহাজ সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের দিকে যাবে কিনা।

ভাগ্য ভালো হলে জাহাজে চেপে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড দেখার সৌভাগ্য হতেও পারে। তবে জেলে নৌকায় ভ্রমনের আগে সামুদ্রিক আবহাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া জরুরি। সার্বিক আবহাওয়া অনুকূল হলে তবেই যাত্রা শুরু করা উচিত।

রাতে থাকা ও খাওয়া সব মিলিয়ে খরচের বিষয়টি যাত্রার আগেই নৌকার মালিকের সাথে চুক্তি করে নেয়া ভালো। জেলে নৌকাগুলো সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের কাছাকাছি একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে মাছ ধরে। সেখান থেকেই সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে একই খরচে সুন্দরবন থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

 

কুয়াকাটা হয়ে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড

কুয়াকাটা থেকে অগ্রিম খোঁজ খবর রাখার ব্যবস্থা থাকলে তবেই কুয়াকাটা থেকে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন। কেননা কুয়াকাটা থেকে সব সময় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার জন্য ট্রলার পাওয়া যায় না। পরিচিত কেউ থাকলে বা তথ্য সংগ্রহের কোনো লিংক থাকলে আগে থেকে জেনে নিন কুয়াকাটা থেকে ট্রলার কোন কোন সময়ে পাওয়া যাবে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সুবাদে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে চেপে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে হানিফ, সাকুরা পরিবহন, সেভেন স্টার সহ আরও বেশ কয়েকটি বাস সরাসরি কুয়াকাটার উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।




কুয়াকাটা থেকে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড যাওয়ার জন্য ট্রলারে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। সবকিছু আগে থেকে চুক্তি করে ট্রলারে চেপে কুয়াকাটা থেকে ঘুরে আসতে পারেন সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এর অসাধারণ রোমাঞ্চকর সৌন্দর্য। এক্ষেত্রে একই সাথে কুয়াকাটা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অর্জন করা হবে।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

জেলে নৌকায় ভ্রমনে করলে রাতে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা নৌকায়ই থাকবে। যেহেতু ভ্রমনের আগেই নৌকার মালিকের সাথে চুক্তি করে নেয়া হবে। তাছাড়া কুয়াকাটা ও মংলা শহরে থাকার জন্য বেশ ভালো মানের আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে সাধারণ মানের অনেক হোটেল পাবেন।

এসকল হোটেলে ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা বা তার বেশি দামে থাকার জন্য রুম পেয়ে যাবেন। তাছাড়া খাওয়ার জন্য মংলা শহরে সাধারণ মানের বেশ কিছু হোটেল পাবেন। কুয়াকাটায় খাওয়ার জন্য বৈচিত্র্য সব মাছ ও ভর্তার আইটেম সমৃদ্ধ খাবার হোটেল পাবেন। তবে নৌকায় যাত্রা শুরু করার আগে সাথে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে নেয়া উচিত।

এই ছিলো সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশাকরি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ট্যুর প্লান করার জন্য আজকের আর্টিকেলটি একটু হলেও আপনাকে সহায়তা করবে। একটি ট্যুর প্লান করার আগে যাতায়াতের যাবতীয় তথ্য ও আবহাওয়ার সার্বিক দিক বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। একটি সুন্দর ও সুপরিকল্পিত ভ্রমনের শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য। ধন্যবাদ।


সেই কন্টিনেন্টাল ড্রিফটের সময়, ভারত উপমহাদেশ দৌড়ে এসে বুডুম করে ধাক্কা মেরে বসলো ইউরেশিয়ান প্লেট আর বার্মা প্লেট-কে। তাদের মাঝখানে গজিয়ে গেল হিমালয়সুদ্ধ তামাম পাহাড়ের দেয়াল, আর তিনদিকে দেয়াল তুলে আলাদা হয়ে বসে রইলো আমাদের উপমহাদেশ। পশ্চিমে যার একটা দরজা, বিখ্যাত খাইবার পাস, আরেক দরজা পূবে, পাটকাই। উপমহাদেশের এই দেয়াল থেকে নেমে কত কত হিমশৈল নদী হয়ে বয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই।

এর মাঝে সবচে লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছে যে, তার নাম ব্রহ্মপুত্র। কৈলাস রেঞ্জে তার উৎপত্তি, সোজা পূবমুখে গড়িয়ে গোটা তিব্বত পেরিয়ে অরুণাচলে এসে বাঁক নিলো দক্ষিণে। অল্পদূর পরেই ডিব্রুগড়ে মোড় ঘুরে রওনা দিল পশ্চিমে, যাব আসাম-মেঘালয়। বাবারে তাতেও শান্তি নেই, কোচবিহারের আগে কী মনে করে মোড় ঘুরে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়লো বর্তমানের বাংলাদেশে, কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে। জিরোবি না তা বুঝলাম বাপু, তা সোজাসুজিও চলবিনে—শেরপুরের বাহাদুরাবাদ এসে আবার মোচড় মেরে চললো পূবে—সেই পূবে, উৎপত্তির পর যেদিকে প্রথম রওনা দিয়েছিল ব্রহ্মপুত্র। ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ হয়ে তার যাত্রা ফুরলো মেঘনা নদীতে।



ব্রহ্মপুত্র যে সে নদী নয়, নামেই বলে, একে তো নদ, তায় ব্রহ্মার পুত্র। তার জন্ম আর গতিপথ নিয়ে চমৎকার এক গল্প আছে। গল্প যদিও জুড়ে গেছে পৌরাণিক চরিত্রের সাথে, কিন্তু তাতে ইতিহাসের উপস্থিতি স্পষ্ট। তা পুরাণ থেকেই শুরু করি?

ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের হাত থেকে অবশেষে কুঠার খসে পড়লো। পৃথিবীকে একুশবার ক্ষত্রিয়শূণ্য করে যে রক্তগঙ্গা বইয়েছিলেন, তার ফলে হাতের সাথে তাঁর কুঠার জুড়ে গেছিল। জড়বৎ হাত থেকে কিছুতেই তা সরছিল না। সে কুঠার অবশেষে মুক্ত হলো হিমালয়ে ব্রহ্মকুন্ড খুঁজে পাবার পর। পর্বতের গায়ে ক্ষুদ্র কুন্ড, তাতে জমা হয়ে আছেন স্বয়ং ব্রহ্মার পুত্র। তাঁর মাঝে স্নানে পাপক্ষয় ঘটে, পুণ্যলাভ হয়। যেমন হলো পরশুরামের। কিন্তু এই স্থানে লুকায়িত কেন ব্রহ্মপুত্র? পুণ্যার্থীদের তবে কী উপায় হবে, এতদূর দুর্গম পথ পেরিয়ে তারা আসবেই কেমন করে পুণ্যস্থানে?


উপায় বের করলেন পরশুরাম। ব্রহ্মপুত্র নিজেই যাবেন, পথ বানাবেন পরশুরাম। কীভাবে? নিজের কুঠারকে লাঙলের মতো ব্যবহার করে পাহাড়ের গায়ে ফাটল কাটলেন তিনি, নদীপথ টেনে নিয়ে চললেন হিমালয় থেকে ভাটিতে। দৈবগুণে বিশাল আকারপ্রাপ্তি ঘটেছে তাঁর, পাহাড়-পর্বত তাঁর কাছে তুচ্ছ। এই মহাত্রার শুরুতেই ব্রহ্মপুত্র অবশ্য সাবধান করেছিলেন, "থামবে না। যেখানে তোমার লাঙল থামবে, সেখানেই রহিত হবে আমার যাত্রা।" পরশুরাম থামলেন না, পাড়ি দিলেন দীর্ঘ পথ, পার্বত্য হিমালয় ছাড়িয়ে এসে পৌঁছুলেন ভাটি বঙ্গে। অবশেষে নারায়ণগঞ্জে এসে লাঙল থামলো তাঁর। শেষ হলো ব্রহ্মপুত্র'র গতিপথ আঁকা। যে স্থানে পরশুরামের লাঙল থেমেছিল, নারায়ণগঞ্জের সে স্থানের নাম হলো 'লাঙলবন্দ'।



"আপনি এখানেই থাকুন, নিজ মহিমায় বঙ্গ অঞ্চলে বিরাজ করুন। আমি আপনার কথা প্রচারে যাত্রা করবো সমগ্র অঞ্চলে।" বলে কাশী যাত্রা করলেন পরশুরাম। এদিকে, সুন্দরী শীতলক্ষ্যা কাছেই প্রবাহিত হচ্ছে শুনে নিজের সংযম হারালেন ব্রহ্মপুত্র। প্রবল বিক্রমে এগিয়ে চললেন তার সাথে মিলিত হতে, পথে প্লাবিত করে চললেন জনপদ। বহু প্রাণক্ষয় হলো, কৃষিজমি তলিয়ে গেল। এদিকে শীতলক্ষ্যা ভীত হলেন ব্রহ্মপুত্রের আস্ফালনে। নিজের যৌবন লুকিয়ে পরিণত হলেন বুড়িগঙ্গায়। কিন্তু বার্ধক্যে দেখেও শীতলক্ষ্যাকে চিনতে ভুল করলেন না ব্রহ্মপুত্র। তার ওপর উপগত হয়েই ক্ষান্ত হলেন। এবং চিরদিনের জন্য হয়ে পড়লেন মিতমহিমা।



ততক্ষণে পরশুরাম উপস্থিত হয়েছেন ঘটনাস্থলে। ভর্ৎসনা করে ব্রহ্মপুত্রকে বললেন, "এ আপনি কী করলেন! নিজের সংযম ভুলে গিয়ে কৌমার্য হারালেন, ঘটালেন প্রাণক্ষয়!"
কাতর মিনতি করলেন ব্রহ্মপুত্র, "আমার যৌবন হারিয়ে গেছে। আমার ধারা মিশে গেছে শীতলক্ষ্যায়। আমি আগে বুঝতে পারিনি। এখন আমার কী করার আছে?"
- "আমি আপনাকে অভিশাপ দিলাম। আপনার মৃত্যু হবে। এই পাপেই আপনি মরে যাবেন।" - "কিন্তু এই যে পুণ্য জল, তার কী হবে? যে নদের জলে স্নান করতে আপনি দিক-বিদিক বলে এসেছেন, সে পুণ্যার্থীদের কী উপায় হবে?" - "সে উপায় আর নেই। আপনার পুণ্যধারা এখন বিলুপ্ত।"

ব্রহ্মপুত্রের বহু অনুনয়ের পরে অভিশাপ শিথিল করলেন পরশুরাম। চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে ব্রহ্মপুত্রের পুণ্যদানের ক্ষমতা থাকবে। তার বাইরে, সারা বছর এই নদ আর সকল জলধারার মতোই, সাধারণ।

সেই যে ব্রহ্মপুত্রের মরণের কথা বলেছিলেন পরশুরাম, সে মরণ আদতেই ঘটেছিল। ইতিহাস বলে, ১৭৮৭ সালে তিস্তা নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে, ভূপ্রকৃতির বিপুল পরিবর্তন ঘটিয়ে নদীটি এসে পতিত হয় ব্রহ্মপুত্রে। এর আগে সরাসরি পদ্মায় যেয়ে মিশত তিস্তা। কিন্তু এই পরিবর্তনের ফলে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের মিলিত বিপুল জলধারা সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হতে শুরু করে যমুনা নামে। আর ব্রহ্মপুত্র নদের আদি গতিপথ, শেরপুর থেকে লাঙ্গলবন্দ, হয়ে পড়ে শীর্ণ, মৃতপ্রায়।

কিন্তু সে জলধারায়, লাঙলবন্দে, প্রতি বছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় পুণ্যস্নান। এখন—বাংলা মাস, আর চান্দ্র তারিখ-টা মিলিয়ে বলো দেখি, আজ কোন তিথি?
সঠিক। চৈত্র মাস, শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথি।

মিথ এবং ফ্যাক্ট হুবহু মেলানো যায় না, আবার মিথের মাঝে ফ্যাক্ট খুঁজে পেলে তাকে ফেলে-ও দেওয়া যায় না। তবে মিথ সর্বদা এডাপ্টিভ, ইতিহাসের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, নতুন বয়ানের সাথে জন্ম দিতে পারে নতুন মিথের। তাই পরশুরামের অভিশাপ আগে ঘটেছিল নাকি তিস্তার গতিপরিবর্তন, সে প্রশ্ন অবান্তর। গল্প শোনাতে তোমাদের ডেকে এনেছিলাম, সে গল্প এইক্ষণে ফুরলো।

তথ্যসূত্র : ১। বঙ্গদেশি মাইথলজি (২য় কিস্তি) -রাজীব চৌধুরী - সতীর্থ প্রকাশনা
২। Teesta River, wikipedia
৩। Brahmaputra River, wikipedia
৪। Google Map
#musarboijatra2025 #Puranas #indianmythology #RiversofBangladesh

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget