সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা চূড়ান্ত | সাধারণ নাগরিকগণ মাসিক ১,৭২,৩২৭ টাকা পেনশন পাবেন
১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩ চূড়ান্ত করেছে সরকার। প্রবাসে থাকা যেসব বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারাও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন।
এই সর্বজনীন পেনশনের আওতায় চারটি স্কিম রয়েছে। চার স্কিমের মধ্যে রয়েছে—প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য), প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য), সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য) এবং সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)। এসব স্কিমে চাঁদার হার কতো হবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
রোববার (১৩ আগস্ট) সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
গেজেটে বলা হয়েছে, ‘সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ (২০১৩ সনের ৪ নং আইন) এর ধারা ২৯ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নরূপ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলো। এই বিধিমালা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩ নামে অভিহিত হইবে। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে। এই বিধিমালায় ব্যবহৃত যে সকল শব্দ বা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা প্রদান করা হয় নাই, সেই সকল শব্দ বা অভিব্যক্তি আইনে যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে সেই অর্থে প্রযোজ্য হইবে। ’
প্রবাস স্কিম
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদান করে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের
পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে, স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে পেনশন স্কিনের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন পাবেন।
প্রগতি স্কিম
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে
এই স্কিমে অংশগ্রহণ না করলে, ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সুরক্ষা স্কিম
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ইত্যাদি তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
সমতা স্কিম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী আয়ের ব্যক্তিরা (যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
স্কিমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা ও নিবন্ধন
১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী জাতীয় পরিচয়পত্রধারী
সকল বাংলাদেশি নাগরিক তাদের জন্য প্রযোজ্য কোনো স্কিমে অংশগ্রহদের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকরাও স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং সেই ক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা দেওয়া শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও তাহাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।
এছাড়া নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়ন করা বা পুনঃইস্যু করা পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে স্কিমে অংশগ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা সমর্পণ করতে হবে। কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিককে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পুরণ করে আবেদন করতে হবে। যার বিপরীতে আবেদনকারীর অনুকূলে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে উল্লিখিত আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার এবং মাসিক চাঁদা দেয়ার তারিখ অবহিত করা হবে।
মাসিক চাঁদা
যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই স্কিমের জন্য ধার্য করা হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে। নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল
সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড’র মাধ্যমে বা তফসিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি পদ্ধতিতে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কর্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।
এছাড়া কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে ৩ কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে তাহার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপ-বিধি অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না। চাঁদাদাতা মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে। সকল স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে। চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা না দিলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ দেওয়া হবে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে বিধান
কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে পারবেন। কোনো চাঁদাদাতার অসচ্ছলতা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ ব্যতীত কোনো চাঁদাদাতাকে অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণা করা যাবে না। চাঁদাদাতার মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল দায়ের করতে পারিবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষিত হবার পর সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করলেও চাঁদাদাতার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি চাঁদাদাতা হলে চাঁদা দেওয়ার বিধান
কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে মানসিক অসামর্থ্যের কারণে অস্বচ্ছল হিসাবে ঘোষিত হলে কর্তৃপক্ষ উক্ত স্কিমের স্বত্ব উক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নমিনি অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীর ওপর ন্যস্ত করতে পারবেন। কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদাদাতার নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী তাহার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে চাঁদার কিস্তি নিয়মিত জমা করে স্কিম চালু রাখতে পারবেন। স্কিমের মেয়াদ শেষে ওই স্কিমের বিপরীতে পেনশনের অর্থ নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা উত্তোলন করতে পারবেন।
চাঁদাদাতা বা পেনশনার নিখোঁজ হলে চাঁদা প্রদানের বিধান
চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে নিখোঁজ ব্যক্তির নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার নিখোঁজ হবার বিষয়টি পেনশনের সম্মুখ অফিসে বা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চাঁদাদাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে নির্দিষ্ট চাঁদার অর্থ জমা করতে পারবেন। চাঁদাদাতা নিখোঁজ হইবার ৭ বছর অতিক্রান্ত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে না আসলে, ওই চাঁদাদাতার স্কিম স্থগিত রাখতে হবে এবং পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে তাকে নিখোঁজ পেনশনার গণ্য করে উপ-বিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পেনশনার তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হবার পূর্বে নিখোঁজ হলে, তার নিখোঁজ হবার ৭ বছর পর পেনশনারের মাসিক পেনশন বাবদ পাওনা তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদের দেওয়া যাবে। তবে নিখোঁজ পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন লাগে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
চাঁদাদাতা কর্তৃক নমিনি মনোনয়ন
স্কিমের চাঁদাদাতা, স্কিমে জমা করা অর্থ বা জমার বিপরীতে প্রাপ্য পেনশন বাবদ অর্থ তার মৃত্যুর পর গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে এক বা একাধিক নমিনি মনোনয়ন করতে পারবেন। যে কোনো সময় নমিনি বাতিল করে এক বা একাধিক নতুন নমিনি নির্বাচন করা যাবে। চাঁদাদাতা কর্তৃক প্রদত্ত একক নমিনি বা একাধিক নমিনির ক্ষেত্রে সব নমিনি মৃত্যুবরণ করলে চাঁদাদাতাকে পুনরায় নমিনি মনোনয়ন করতে হবে।
নমিনি নাবালক হলে চাঁদাদাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নমিনির পক্ষে স্কিমের প্রাপ্য অর্থ গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য চাঁদাদাতা নমিনি প্রদানকালে যে কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাবালকের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হবেন।
চাঁদাদাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাব
স্কিমের আওতাভুক্ত প্রত্যেক চাঁদাদাতার নামে একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে, যা তার কর্পাস হিসাব হবে এবং উক্ত কর্পাস হিসাবে চাঁদাদাতা কর্তৃক জমা করা চাঁদার অংক হিসাবায়ন করা হবে। কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছর শেষে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী কর্পাস হিসাবের স্থিতির ওপর লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। চাঁদাদাতার জমা করা চাঁদার ওপর ঘোষিত নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ আকলন দেখিয়ে কর্পাস হিসাবের পুঞ্জীভূত জমার পরিমাণ নির্ধারিত হবে। চাঁদাদাতার কর্পাস হিসাবে পুঞ্জীভূত জমার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মাসিক পেনশন (অ্যানুইটি)-এর পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।
স্কিমের রূপান্তর
চাঁদাদাতা যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তার অনুকূলে চালু করা স্কিমের পরিবর্তে অন্য স্কিম বা স্কিমের চাঁদা প্রদানের হার পরিবর্তন করতে পারবেন। স্কিম রূপান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত স্কিমে নতুন চাঁদার হিসাব পৃথক রেখে লভ্যাংশ ও পুঞ্জীভূত জমার অর্থের হিসাব করতে হবে, যা পূর্বতন স্কিমের পুঞ্জীভূত জমার সঙ্গে যুক্ত হবে। স্কিম রূপান্তরের কারণে মেয়াদ পূর্তিতে মাসিক পেনশনের পরিমাণ পুনঃনির্ধারিত হবে।
স্কিমের স্বত্ব
এই বিধিমালার অধীন কোনো চাঁদাদাতার অনুকূলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা কোনো স্কিমের সম্পূর্ণ স্বত্ব উক্ত স্কিমের চাঁদাদাতার থাকবে। পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতা ওই স্কিমের স্বত্ব জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা স্বত্বার কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না। তবে স্কিম বা পেনশন চলাকালে যে কোনো সময়ে চাঁদাদাতার মৃত্যু হলে ওই স্কিমের অর্থ চাঁদাদাতা কর্তৃক মনোনীত নমিনি বা নমিনির অবর্তমানে চাঁদাদাতার উপযুক্ত উত্তরাধিকারী বরাবর হস্তান্তরে কোনো বাধা থাকবে না।
প্রদত্ত চাঁদা থেকে ঋণ গ্রহণ
চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিবাহের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনে তহবিলে কেবল তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবেন। যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য করা ফিসহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং সমুদয় অর্থ চাঁদাদাতার হিসাবে জমা হবে। গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুন ভাবে কোনো ঋণ গ্রহণ করা যাবে না।
চাঁদাদাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর স্কিমের বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ প্রদান
চাঁদাদাতা নমিনী প্রদানপূর্বক মৃত্যুবরণ করলে এবং তাহার মৃত্যুর পর নমিনি মনোনয়ন কার্যকর থাকলে উক্ত স্কিমের অর্থ নমিনি প্রাপ্য হবেন। নমিনি নাবালক হলে চাঁদাদাতা বা পেনশনারের মৃত্যুর পর বিধি ১০ এর উপ-বিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি স্কিমের বিপরীতে জমা করা অর্থ বা পেনশনের অর্থ প্রাপ্য হবেন এবং উক্তরূপ কোনো ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত না হলে নাবালকের আইনসম্মত অভিভাবক উল্লিখিত স্কিমের আওতায় পাওনা অর্থ প্রাপ্য হবেন।
কোনো স্কিমের বিপরীতে একাধিক নমিনি থাকলে এবং যে কোনো একজন নমিনি মৃত্যুবরণ করলে এবং মৃত নমিনির বিপরীতে নূতন কোনো নমিনি মনোনয়ন না করা হইলে, জীবিত নমিনি বা নমিনিরা উল্লিখিত স্কিনে উত্তরাধিকারী হিসাবে গণ্য হবেন এবং উক্ত স্কিনের অর্থ প্রাপ্য হবেন। কোনো স্কিমের চাঁদাদাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হইবার পর মৃত্যুবরণ করলে উক্ত স্কিনে জমা করা পুঞ্জীভূত অর্থের ভিত্তিতে পেনশন নির্ধারণপূর্বক
তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদের
পেনশন দেওয়া যাবে এবং এই ক্ষেত্রে উপ-বিধি (৫) এর বিধান প্রযোজ্য হবে।
এই বিধির আওতায় কোনো স্কিমের চাঁনাদাতা পেনশনে থাকাকালীন তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হবার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনি না থাকলে তার উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা অবশিষ্ট সময়ের জন্য অর্থাৎ মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন অবশিষ্ট থাকবে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। কোনো স্কিমের চাঁদাদাতা মাসিক পেনশন প্রাপ্যতা অর্জিত হবার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা নমিনির অবর্তমানে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা
মুনাফাসহ জমা করা অর্থ ফেরত পাবেন।
চাঁদাদাতা বা পেনশনার মৃত্যুবরণ করলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধান
নমিনীর অবর্তমানে উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইস্যু করা উত্তরাধিকার সনদের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল করতে পারিবেন। আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
রেকর্ড সংরক্ষণ
কর্তৃপক্ষ স্কিমের হিসাব, পেনশন হিসাব, কর্পাস হিসাব, চাঁদাদাতা ও নমিনির জীবন বৃত্তান্তসহ যাবতীয় তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ ও নিয়মিত হালনাগাদ করার পাশাপাশি ব্যাকআপ রাখবে।
জমাকৃত অর্থ চাঁদা দাতা যে কোন সময় এটি উত্তোলন করতে পারবেন / যে কোন সময় পেনশন স্কিম পরিবর্তন করা যাবে
১৮ বছরের অধিক বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা সম্ভব হলে তারা একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতাভুক্ত হবেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর হলে ধীরে ধীরে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমাদের বয়স্ক জনসাধারণের সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।
সার্বজনীন পেনশন
আইন । যে ২০টি নিয়ম
বা আইন জানা জরুরি চলুন
জেনে নিই
1.
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
2.
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীগণও এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
3.
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের আপাতত নতুন জাতীয় পেনশন–ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁদের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
4.
জাতীয় পরিচয়পত্রকে
ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন।
5.
ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।
6.
প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে।
7.
সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের
চাঁদা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে।
8.
মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসী কর্মীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দিতে পারবেন।
9.
সুবিধাভোগীরা বছরে ন্যূনতম বার্ষিক জমা নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় তাঁর হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে হিসাব সচল করতে হবে।
10.
সুবিধাভোগীরা আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বাড়তি অর্থ (সর্বনিম্ন ধাপের অতিরিক্ত যেকোনো অঙ্ক) জমা করতে পারবেন।
11.
পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে।
12.
পেনশনধারীরা আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগপর্যন্ত পেনশন–সুবিধা ভোগ করবেন।
13.
নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে জমাকারীর নমিনি বাকি সময়কালের (মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
14.
পেনশন কর্মসূচিতে জমা করা অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
15.
কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে নিবন্ধিত চাঁদা দানকারী মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তাঁর নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
16.
পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
17.
এ ব্যবস্থা স্থানান্তরযোগ্য ও সহজগম্য অর্থাৎ কর্মী চাকরি পরিবর্তন বা স্থান পরিবর্তন করলেও তার অবসর হিসাবের স্থিতি, চাঁদা প্রদান ও অবসরসুবিধা অব্যাহত থাকবে।
18.
নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের ক্ষেত্রে পেনশন কর্মসূচিতে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারে।
19.
পেনশন কর্তৃপক্ষসহ
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে।
20.
পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলে জমা করা টাকা নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে (সর্বোচ্চ আর্থিক রিটার্ন নিশ্চিতকরণে)।
21.
ন্যূনতম কত বছর চাঁদা দিতে
হবে?
চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। সরকার কর্তৃক, সময়ে সময়ে, প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকগণের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করবে।