৯০ দশকের শেষের দিকে বই মেলাতে আমার প্রথম বই বের হয়। সেই থেকে বই মেলার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। পরের বছর বই মেলাতে আমার কোন বই প্রকাশ হয়নি, তবে আমার করা প্রচ্ছদে কয়েকটা বই প্রকাশ হয়। এরপর প্রতি বছরই আমার লেখা বই প্রকাশের পাশাপাশি অনেক লেখকের বইয়ের প্রচ্ছদ করেছি বইমেলাতে। গত বছরও বই মেলাতে আমার করা প্রচ্ছদে বই প্রকাশ হয়েছে। শুধু এবার বই মেলাতে আমি কোন বইয়ের প্রচ্ছদ করিনি বা আমাকে দিয়ে কেউ প্রচ্ছদ করায়নি। মানে এবছর বই মেলার সঙ্গে আমার একটা বিচ্ছেদ হয়েছে!
প্রচ্ছদ করা নিয়েও আমার হরেক রকম অভিজ্ঞতা আছে। নাম প্রকাশ না করে একজন শিল্পীর (আর্টিস্ট) এর সঙ্গে আমার কাজ করার মজার অভিজ্ঞতা বলি, তখন ২০০২ সাল, নামকরা প্রচ্ছদ শিল্পীর হাতে প্রচুর প্রচ্ছদের কাজ ছিল। তাঁর কাজের চাপ অনেক, অপর দিকে তিনি ভয়ানক আড্ডাবাজ। আড্ডা দিবেন নাকি প্রচ্ছদের কাজ করবেন তা নিয়ে তিনি একটা যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে পড়ে গেলেন।
শেষমেষ তাঁর সঙ্গে আমার একটা বোঝাপড়া হলো। আমি তাঁর প্রক্সি দিবো। তিনি প্রতিদিন সকালে আমাকে ৪/৫ টা বইয়ের প্রচ্ছদের দায়িত্ব দিয়ে আড্ডা মারতে চলে যেতেন। সন্ধ্যায় এসে তিনি আমার কাছ থেকে প্রচ্ছদের কালার প্রিন্ট আর পজেটিভ নিয়ে যেতেন। তার কাজে কোন কারেকশন চলে না, সেটা আমার জন্য আরো সুবিধার হলো। সকালে তিনি জাস্ট একটা ধারনা দিতেন, রাতে আমি আউটপুট দিতাম। প্রতিটা কাজে তিনি আমাকে ১২৫০ টাকা দিতেন।
তবে কোন প্রচ্ছদে আমার নাম থাকতো না, থাকতো তাঁর নাম। এতে আমার কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। আমি ওই বছর তার কাছ থেকে প্রায় ৩২ হাজার টাকার কাজ করেছিলাম। ওই বছর আমার নিজের নামেও কয়েকটা প্রচ্ছদ ছিল।
বাংলাবাজারে শাজাহান বাচ্চু ভাইসহ অনেক প্রকাশকের সঙ্গে আমার তুমুল সম্পর্ক ছিল। ওই সব প্রকাশকরা আমাকে প্রচুর খ্যাপের কাজ দিতেন। তাদের বেশির ভাগ কাজই হতো কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদের কাজ।
মজার ব্যপার হলো, ওই সব প্রকাশকদের মধ্যে মুরগী ধরা কিছু প্রকাশকও ছিলেন। তারা নতুন লেখকদের বই বের করতেন। ওইসব বইয়ের খুব বেশি প্রুফ দেখা হতো না, জাস্ট ধর তক্তা মার পেরেক টাইপের বই প্রকাশ হতো তাদের দিয়ে। তাদের প্রকাশ করা বইয়ের প্রচ্ছদের কাজ খুব মজার ছিল। কারন তাদের বেশিরভাগ বইয়ের টাইপ ছিল ' মুখে মধু অন্তরে বিষ' 'তুমি বুঝলে না প্রিয়' ' কস্ট দিলে, নস্ট হলাম' এমন ধরনের। এসব বইয়ে কোন আইএসবিএন করা হতো না। জাস্ট মুরগী ধরে জবাই করার মত তারা বিজনেজ করে নিতেন।
ওই প্রকাশকদের ধরা লেখকদের বইয়ের প্রচ্ছদের ডিমান্ডও থাকতো খুবই হাস্যকর। কেউ বলতেন নায়িকা পূনির্মার ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করে দেন, কেউ বলতো তার নিজের ছবি বড় করে দিয়ে তার হাতের তার হার্ট ধরিয়ে দিতে (অনন্ত জলিলের পোস্টারের মত)।
এসব বইয়ের প্রচ্ছদে আউটপুট হতো, কালার প্রিন্ট হতো না। সব মিলিয়ে তারা সাড়ে সাত শত টাকা দিতেন। এই প্রচ্ছদ করার সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা খুবই টাফ, তারপরও করা সহজ ছিল। কারন কোন আইডিয়া বা কোয়ালিটির কোন টেনশন নাই, জাস্ট তার মত করে ছেড়ে দেয়া। এতে সময় লাগতো সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। আর ২০ মিনিটেই সাড়ে সাত শত টাকা! ব্যাপারটা তখন মজারই লাগতো।
লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে, তাই অন্য পোস্টে আরো মজার অভিজ্ঞতা লিখবো। আজ এই পর্যন্ত।
Post a Comment