নির্যাতনের শিকার যে কেউ হটলাইনে(16430)কল দিলেই পাবে আইনিগত সহযোগীতা
‘প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।’-এই সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সরকারি অর্থায়নে আইনী পরামর্শ ও মামলা পরিচালনায় আইনগত সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। অসহায় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা দায়েরের প্রয়োজন হলে সরকারি খরচে মামলা দায়ের ও পরিচালনা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রের অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধা-বঞ্চিত সকল মানুষদের এই সেবা প্রদান করার জন্য বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে, এমনকি সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টেও লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করেছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। কমিটিগুলো সারা দেশে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। প্রত্যেক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে একজন করে সিনিয়র সহকারী জজ/সহকারী জজকে লিগাল এইড অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তারা আইনগত সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন।
এছাড়া জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি কল সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি একটি নম্বরের মাধ্যমে হেল্পলাইন সার্ভিস কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এই টোল ফ্রি নম্বরটি হলো : ১৬৪৩০
টোল ফ্রি এ নম্বরে যে কোনো মোবাইল/টেলিফোন থেকে ফোন করে আইনি পরামর্শ, আইনগত তথ্য, লিগ্যাল কাউন্সিলিং, মামলা করার প্রাথমিক তথ্য, সরকারি আইসি সেবা সম্পর্কিত যে কোনো পরামর্শ, সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ সম্পর্কিত সেবা পাওয়া যায়। এর জন্য কোনো কলচার্জ কাটা যায় না। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় লিগ্যাল এইড সেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয় লিগ্যাল এইড অনলাইন কার্যক্রম।
লিগ্যাল এইড অফিস থেকে যেসব আইনি সেবা প্রদান করা হয় :
১. যে কোনো ব্যক্তি, তার আর্থিক সামর্থ্য যা-ই হোক না কেন, সরকারি আইনগত সহায়তা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত আইনগত তথ্যসেবা গ্রহণ, আইনগত পরামর্শ গ্রহণ কিংবা বিবদমান পক্ষসমূহের মধ্যে আপসযোগ্য বিরোধসমূহ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সেবাসমূহ;
২, অসহায় ও দরিদ্র ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা দায়েরের প্রয়োজন হলে সরকারি খরচে মামলা দায়ের ও পরিচালনা করা;
৩. মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবী নিয়োগ;
৪. আদালত থেকে প্রেরিত মামলাসমূহ মধ্যস্থতা করা;
৫. বিনা মূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ;
৬. আইনজীবীর ফি পরিশোধ;
৭. মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সব ব্যয় পরিশোধ;
৮. ফৌজদারি মামলার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ;
৯. মধ্যস্থতাকারী বা সালিশকারীর সম্মানি পরিশোধ;
১০. ডিএনএ টেস্টের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ;
১১. বিনা মূল্যে রায় কিংবা আদেশের অনুলিপি সরবরাহ।
যারা আইনগত ও মামলা পরিচালনার জন্য আথিক সহায়তা পাবেন :
১. অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি
২. কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন
৩ কোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় ১,০০,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে নয়;
৪ শিশু;
৫. মানব পাচারের শিকার কোনো ব্যক্তি;
৬. শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু;
৭. নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে;
৮. ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের লোক;
৯. পারিবারিক সহিংসতার শিকার অথবা সহিংসতার ঝুঁকিতে আছেন এরূপ যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি;
১০. বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এরূপ কোনো ব্যক্তি;
১১. ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা;
১২. দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিডদগ্ধ নারী বা শিশু;
১৩. আদর্শগ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি;
১৪ অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুস্থ মহিলা;
১৫. প্রতিবন্ধী;
১৬. আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করিতে অসমর্থ ব্যক্তি;
১৭. বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল;
১৮. আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি;
১৯. জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল হিসাবে সুপারিশকৃত ব্যক্তি।
আমীর মুহাম্মদ. সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক ইত্তেফাক।
Post a Comment