গণপরিবহনে এবং বাসার বাইরে নারী নির্যাতন থামবে না?

গণপরিবহনে এবং বাসার বাইরে নারী নির্যাতন থামবে না?


গণপরিবহনের নারীরা শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা স্বাধীন চলাফেরায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে। রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহনসহ সর্বত্র কখনো উদ্যেশপ্রনোদিত ভাবে নারীর শরীর স্পর্শ করে বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে অথবা শরীরের দিকে তাকিয়ে কুদৃষ্টি বা অঙ্গভঙ্গি করে বা শারীরিক গঠন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের মাধ্যমে নারীদেরকে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। গণপরিবহনে ভিড়ের মাঝখানে নারীরা সব থেকে বেশি শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।

আবার গণপরিবহনে উঠতে গেলে নারীদের হাত ধরে তোলা, হাতের নিচ দিয়ে স্পর্শকাতর জায়গা ছোঁয়া, পিঠে হাত দিয়ে চিমটি কাটা- হেল্পার আর কন্ডাক্টরের এসব যৌন হয়রানি প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান একটি বিষয়। বেশিরভাগ সময় মেয়েরা এগুলো প্রকাশ করেন না। এক বেসরকারী সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ নারী তারা চুপ থাকেন এবং ৭৯ শতাংশ বলেছেন আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যান। কারন এসব পরিস্থিতিতে নারীরা প্রতিবাদ ওইসব পুরুষ দলবদ্ধভাবে নারীকে উল্টে শাসায়, তাঁদের ওপরেই দোষারোপ করা হয় এবং আশপাশের মানুষ নীরব ভূমিকা পালন করে। তাদের কেউ কেউ পাশ থেকে হয়তো বলে উঠছে, ভিড়ের মধ্যে বাসে ওঠেন কেন?


ব্র্যাকের একটি গবেষণা বলছে, গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। এই হয়রানিমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগই মাঝবয়সী বা তার বেশি বয়সী পুরুষ। যৌন হয়রানিগুলোর ধরন ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করা, চিমটি কাটা, শরীর ঘেঁষে দাঁড়ানো, আস্তে আস্তে ধাক্কা দেওয়া, স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করা, গায়ের ওপর ইচ্ছাকৃত ঘুমিয়ে পড়া, কাঁধে হাত দেওয়া।
 
চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত 'ঢাকা শহরে গণপরিবহনে হয়রানি : কিশোরী এবং তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব' শিরোনামে আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গণপরিবহনে চলতি বছর গত ৬ মাসে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ কিশোরী ও তরুণী বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ বুলিং; ১৫ দশমিক ২ শতাংশ সামাজিক বৈষম্য; ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ লিঙ্গ বৈষম্য এবং ৮ দশমিক ২ শতাংশ বডি শেমিংয়ের মতো হয়রানির মধ্য দিয়ে গেছেন।
 
এতে দেখা যায়, যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের ৭৫ শতাংশই অন্য যাত্রীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ২০ দশমিক ৪ শতাংশের মত, তাঁরা হেল্পার কর্তৃক এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ ছাড়া ৩ শতাংশ হকারের মাধ্যমে এবং ১ দশমিক ৬ শতাংশ ড্রাইভারের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
 
বাসার বাইরে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন করতে নানা ধরণের নেতিবাচক বা আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়। চলতি পথে, বাসের ভিড়ে, সহকর্মীদের আলোচনায়, পারিবারিক সমালোচনায়, বন্ধুদের আড্ডায় বুঝে কিংবা না বুঝে নারীরে শরীরের ওজন,গায়ের রঙ, উচ্চতা, মুখাবয়বের গঠন, কণ্ঠস্বর প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নারীরা প্রতি অসংবেদনশীল ভাষার ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ শব্দগুলো যে শুধু পুরুষ ব্যবহার করেন, তা কিন্তু নয়; নারীরাও প্রায়ই তাঁদের সম্মানের প্রতি চরম অবমাননাকর এসব ভাষার প্রয়োগ করেন খুব স্বাভাবিকভাবে, চিন্তাভাবনা না করেই। এই অবমাননাকর ভাষাগুলো আমাদের দৈনন্দিন শব্দভান্ডারে এমনভাবে মিশে আছে যে তা প্রয়োগ করার আগে আমরা নিজেরাও তলিয়ে দেখি না এসব ভাষা কীভাবে আমাদের নিজেদের কিংবা আমাদের আপনজনকে অপমানিত করছে। অনেক শব্দের মাধ্যমে নারী যে আহত বা অসম্মানিত হতে পারে, সে ব্যাপারে ধারণাও থাকে না অনেক মানুষের।
 
আমীর মুহাম্মদ. সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক ইত্তেফাক।

Post a Comment

[blogger]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget